চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

চুল মানুষের একটি সৌন্দর্যের প্রতীক কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে চুল পড়া বা মাথায় পাতলা চুল  মানুষের সৌন্দর্যকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। সাধারণত যখন চুলের ফলিকলগুলো স্বাভাবিক পর্যায়ে যায় তখনই এসব ঘটে।সাধারণত একজন পুরুষ প্রতিদিন ২৫ থেকে ১০০ চুলের ফলিকল হারাতে পারে।মানুষের মাথায় দুই ধরনের চুল আছে -অ্যানাজেন এবং টেলুজেন ।অ্যানাজেন  একটি কালো চুলের ফলিকল এবং টেলজেন একটি সাদা  চুলের ফলিকল ।টেলজেন সাধারণত প্রতিদিনই পরে এবং সাধারণ ব্যক্তির মধ্যে তা ১০০ এর কম হওয়া ভালো কিন্তু যদি প্রতিদিন ১টি -অ্যানাজেন  চুল পড়ে তবে তা চিন্তার কারণ হতে পারে। তাই চুল পড়া বন্ধে কেমিক্যাল যুক্ত পণ্যের বদলে প্রাকৃতিক প্রতিকারই উত্তম হবে। চুল পড়া রোধে প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে  ভোগে


সুপ্রিয় পাঠক,এই আর্টিকেলটিতে প্রমাণিত পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবে চুলপড়া   কিভাবে বন্ধ করা যায় এবং চুলপড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব।তাই নিবন্ধনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সুচিপত্রঃ চুল পড়া বন্ধ করার উপায়-

  • সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা
  • নারকেলের দুধ ব্যবহার
  • নিমপাতার ব্যবহার
  • মেথির ব্যবহার
  • পেঁয়াজের রস 
  • আলুর রসের ব্যবহার
  • শেষ ভাবনায় 

সুষম খাদ্য নিশ্চিত করাঃ 

চুল পড়া একটি স্বাভাবিক সমস্যা যা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া দ্রুতগতির নয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চুল পড়া নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্তা নিলে চুল পড়া যে অতি দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় এরূপ মনে করা ঠিক নয়। অনেক সুষম খাদ্য আছে যা চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক  কার্যকর ভূমিকা পালন করে- যেমন মুসুরি ডাল, স্পিনাচ, ক্যারট ইত্যাদি চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কারণ এগুলোতে ভিটামিন পাওয়া যায়। যা চুলকে সুস্থ করে তোলে। ভিটামিন সি ও কিন্তু   চুল পড়া কমায়, চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ছাড়াওচুলের যত্নে ভিটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেভিটামিনের সবৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, মোট্‌র, আমন্ড এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে  অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন- পাওয়া যায়।যা এগুলো চুলের বৃদ্ধি ঘটায় উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলেতবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত শরীর চর্চা করা ও মানসিক  চাপমুক্ত জীবন চুলের সুস্থতা বাড়াতে ভূমিকা পালন করে।

নারকেলের দুধ ব্যবহারঃ

চুল পড়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কিন্তু যদি স্বাভাবিকভাবে চুলে চিরুনি দিলে চুল ভর্তি হয়ে চলে আসে তবে তা চিন্তার কারণ হতে পারে। আমরা অনেকেই নারকেল তেল ব্যবহার করি চুলের যত্নে কিন্তু এর দুধ উপকারী চুলের জন্য বেশ উপকারি। এতে কোন রাসায়নিক উপাদান নেই তাই নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়।এটি চুল ও স্ক্যালের  ভিটামিন ঘাটতি পূরণ করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এছাড়া ও চুল পড়া বন্ধে বেশ কাজ করে। নারকেলের দুধ ব্যবহারের জন্য লাগবে একটি নারকেল ও নারকেল এর  দুধ এবং শাওয়ার ক্যাপ । নারকেল কুরিয়ে এর থেকে দুধ বের করে হালকা গরম করে নিতে হবে কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যাতে বেশি গরম না হয় ।এই দুধ মাথার ত্বক ও চুলে  ভালোভাবে মেসেজ করতে হবেতারপর শাওয়ারকেপ লাগিয়ে এক ঘন্টা অপেক্ষা করে মানানসই ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে একবার এভাবে ব্যবহার করলে চুল যেমন মজবুত হবে তেমনি হবে সুন্দর সাথে চুল পড়াও অনেকাংশে কমে যাবে।

নিমপাতার ব্যবহারঃ 

চুল পড়া সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের জন্য নিমপাতা একটি পুরনো নিয়ামক। চুলের জন্য এর পুষ্টিগুণ চুলকে মজবুত করতে সহায়তা করে। নিমপাতা চুলের গোড়া শক্ত করে চুলকে করে ঘন এবং লম্বা,এছাড়াও চুলের বৃদ্ধিতে নিমপাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  10 থেকে 12 টি নিমপাতা নিয়ে এর রস বের করে তাতে পরিমাণ মতো নারিকেল তেল দিয়ে পেস্ট করুন।এই পেস্টটুকু ত্বক চুলে মেখে আধঘন্টা রাখুন ,তারপর ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে এবং আপনি পাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত চুল।

মেথির ব্যবহারঃ

চুল পড়া একটি অস্বস্তিকর সমস্যা।শারিরিক বা মানসিক অনেক কারণেই চুল পড়তে পারে। বেশি চুল পড়া প্রতিকারে চুলের যত্নে মেতের ব্যবহার অন্তত কার্যকরী। মেথিতে রয়েছে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন-সি, আয়রন এবং পটাশিয়াম যা মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়াতে চুলের অকালপক্কতা রোধে কাজ করে। মেথির ব্যবহার প্রক্রিয়ায় ২০০ থেকে ৩০০ এমএল পানিতে ৫০০ গ্রাম মেথি ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে তারপর সেখান থেকে এক গ্লাস পানিতে নিয়ে খেয়ে ফেলুন। বাকিটুকু স্প্রে বোতলে নিয়ে নিন। পরে মাথার চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত এই স্প্রে ভালোভাবে মিশ্রিত কর। কিছুক্ষণ মেসেজ করে এক ঘন্টা পরে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের গোড়া শক্ত হয়ে যাবে ,চুল পড়া কমে যাবে- সাথে চুলের খুশকি দূর হবে।

পেঁয়াজের রসঃ 

মানসিক দুশ্চিন্তায় আপনার চুল পড়ে যাচ্ছে। পেঁয়াজের রস হতে পারে আপনার উত্তম সহায়ক।এই রস মাথার ত্বকে রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটায় ।পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে ছাকনির সাহায্যে এর রস বের করে নিতে পারেন ।মাথার ত্বক চুলে এই রস পনেরো মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন ।এতে আপনার চুল পড়া কমবে কারণ পেঁয়াজের রসে থাকা এলাইসিন সালফার চুল পড়া কমিয়ে দেয় এছাড়া ইহা সালফার কেরাটিন তৈরিতে সাহায্য করে যা চুলের গুড়া মজবুত করে।


আলুর রসের ব্যবহারঃ 

চুল পড়া সমস্যা নারী-পুরুষ উভয়েরই সৌন্দর্য নষ্ট করে।এইজন্য নারী-পুরুষ উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হন। মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়া আসলেই চিন্তার বিষয়। চুলের এই ধরনের সমস্যায় আলুর রসের হেয়ার প্যাক আপনার জন্য অতি প্রয়োজনীয় কার্যকরী একটি টিপস  হতে পারে। এই প্যাক ব্যবহার করলে আপনার চুল পড়া কমবে,চুলের দ্রুত বৃদ্ধি  ঘটবে পাশাপাশি  চুল হবে  ঝলমলে এবং  শক্ত হবে চুলের  গুড়া। এই পেক তৈরিতে আপনার লাগতে পারে পরিষ্কার তিনটি আলু ,একটি ডিম্এক চাচামচ মধু। একটি পাত্রে প্রথমে তিনটি আলুর রস নিয়ে তাতে ডিমের কুসুম এক চা- চামচ মধু মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত স্প্রে করে প্রায় ৪০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এতে আপনার চুল পড়া অনেক কমে যাবে।


শেষ ভাবনায়ঃ 

একজন স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়ে ।এর বেশি হলে সেটা চিন্তার কারণ ।দুশ্চিন্তা ,ক্লান্তি, মেজাজ পরিবর্তন এসব সমস্যায় মানুষের অনেক চুল পড়ে। চুল পড়া বন্ধে অনেক প্রাকৃতিক চিকিৎসা উপায় থাকলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।এই সমস্যায় আপনার সহযোগী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রেসক্রিপশন এর মাধ্যমে আপনাকে দিকনির্দেশনা দিতে পারেনতারপরও আপনি উপরের টিপস গুলো ব্যবহার করে ইতিবাচক ফলাফল দিবে কিনা  তা মিশ্রিত  করে প্রয়োগ করতে পারেন ।আশা করি আপনি নিরাশ হবেন না ।এছাড়াও চুল পড়া রোধ করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন চুলের সঠিক যত্ন চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। চুলে খাপ খাওয়ানো উপযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুলে, চুলকে হাইড্রেট করে কন্ডিশনিং করলে ,মোটা দাঁত যুক্ত চিরুনি ব্যবহার করে  আঁচড়ানো চুলের জন্য অনেক ভালো। ভেজা চুলে চুল বাধা চুলের জন্য ক্ষতিকর

সুপ্রিয় পাঠক,এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের চুল পড়া বন্ধে কি কি করবেন, কি কি টিপস ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে্এবং স্বাস্থবান চুলের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কি কি করনীয় তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।আশা রাখছি ,আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন তারপরও যদি কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ এতক্ষণ মনোযোগ সহকারেআর্টিকেলটি পড়ার জন্য।ভালো থাকবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url