ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার ব্যাপারে কি বলে
ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার ব্যাপারে কি বলে আপনি কি তা জানতে চান তাহলে পোস্টটি আপনার জন্য। আজ এই পোস্টে আমি ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার ব্যাপারে কি বলে তা বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি যদি ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার ব্যাপারে কি বলে তা ভালোভাবে জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ইসলামে আমাদের জীবনের সবকিছুর নিয়ম করে দিয়েছে। আল্লাহ কোরআন এবং হাদিসের মাধ্যমে
খাবারের সঠিক নিয়মও জানিয়েছেন। তবে এখানে প্রশ্ন হল হল ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার
ব্যাপারে কি বলে? তাহলে চলুন নিচে জেনে নেওয়া যাক ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার
ব্যাপারে কি বলে তার বিস্তারিত।
সূচিপত্রঃ ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার ব্যাপারে কি বলে
খাওয়ার আগের অভ্যাস
আল্লাহর নাম দিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করুন (পরম করুণাময়, করুণাময় আল্লাহর
নামে)। ইমাম আলী (আ.) বলেছেনঃ খাওয়ার আগে আল্লাহকে স্মরণ করুন এবং খাওয়ার
মাধ্যমে গালাগালি এড়িয়ে চলুন কারণ খাদ্য আল্লাহর দান এবং আপনার উচিত তাকে
স্মরণ করা এবং শুকরিয়া জানানো।
খাবারের আগে সামান্য লবণ খাওয়া। ইমাম আলী (আ.) বলেছেনঃ খাওয়ার শুরুতে সামান্য
লবণ খান। মানুষ যদি লবণের প্রকৃতি ও উপকার জানত, তবে তারা বিভিন্ন নিরাময়ের
পরিবর্তে এটি ব্যবহার করবে।
ভিনেগার দিয়ে খাবার শুরু করতে পারেন। মোহাম্মাদ ইবন আলী আ. বলেনঃ খোরাসানে এক
ব্যক্তি ইমাম রেযার সাথে দেখা করলেন। ইমামকে সিরকা এবং লবণের সাথে একটি ভিনেগার
খাবার দেওয়া হয়েছিল। ইমাম ভিনেগার দিয়ে খেতে লাগলেন। ঐ ব্যক্তি ইমাম (আঃ) কে
বললঃ আপনি আমাদের লবণ দিয়ে শুরু করার আদেশ দিয়েছেন কিন্তু ভিনেগার কেন? ইমাম
বললেন, ভিনেগার মনকে শক্তিশালী করে এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করে।
খাবার আগে হাত ধুয়ে নিতে হবে। খাওয়ার আগে এবং পরে আপনার হাত ধুয়ে নিন। ইমাম
আলী (আ.) বলেছেনঃ খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার ফলে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে মুক্ত
রাখে। তাই নিজের শরীর সুস্থ রাখতে খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার ব্যাপারে কি বলে
আদম সন্তানের জন্য খাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে
শক্তি আসে। কিন্তু খাওয়া নিয়ে ইসলামে যে কথা বলা হয়েছে ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার
ব্যাপারে কি বলে তা হল, মানুষের পেটের ভরতে হবে এক তৃতীয়াংশ খাবার দিয়ে, এক
তৃতীয়াংশ পানীয় দিয়ে এবং এক তৃতীয়াংশ বাতাস দিয়ে। আল-তিরমিযী (2380)। ইসলামে
পেট ভরে শুধু খাবার খাওয়ার কথা নিষেধ করেছেন। খাবার, পানি এবং বাতাস দিয়ে ভরতে
হবে।
আরো পড়ুনঃ ফজরের নামাজ কয় রাকাত
খাওয়া ও অন্যান্য বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি দোষের। আল্লাহ বলেনঃ "আর খাও ও পান
কর, কিন্তু অযথা অপচয় করো না, নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) আল-মুসরিফুনকে পছন্দ
করেন না।" [আল-আরাফ, আয়াত ৭:৩১] "নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই এবং শয়তান
তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ।" [আল-ইসরা' আয়াত 17:26-27]।
এখানে বাড়াবাড়ি কথাটির অর্থ হল পেট ভরে যাওয়ার পরেও খেতে থাকে। এটি দিনে এক
বা দুই বা তিনটি খাবারের সাথে সম্পর্কিত নয়। মানে মানুষ দিনে তার যতবার ইচ্ছা
খেতে পারে যদি ক্ষুদা পায়। কিন্তু সেই খাবারের সময় অতিরিক্ত খেতে নিষেধ করা
হয়েছে এতে নিজের শরীরের ক্ষতি হয়। খাবার আমরা সাধারণত তিন বার খায়, সকালের
নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার। তাহলে আপনি জতবারই খান না কেন পেটের
এক তৃতীয়াংশ খাবার দিয়ে, এক তৃতীয়াংশ পানীয় দিয়ে এবং এক তৃতীয়াংশ বাতাস
দিয়ে ভরবেন। এখান থেকে ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার ব্যাপারে কি বলে তা জানা
যায়।
খাওয়ার ব্যাপারে মহানবী (সাঃ) এর কিছু সুন্নাহ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনধারা অনেক আশীর্বাদ ও জ্ঞানে
পরিপূর্ণ, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার বিষয়ে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে খেতেন সে সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে যা আমাদের
দৈনন্দিন জীবনে শেখা এবং ব্যবহার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এখানে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু সহজ সুন্নত রয়েছে যা আপনি আজ থেকে শুরু করতে পারেন যা
আপনার খাবারে বরকত যোগ করবে ইনশাআল্লাহ।
কখনই কোনো খাবারের সমালোচনা করবেন না
খাবার যে রান্নাই করুক না কেন খুব কষ্ট করে তাই সেই খাবার নিয়ে খারাপ কথা বলা
উচিত নয়। মহানবী সাঃ এর যদি কোনো খাবার পছন্দ না হত তিনি সেই খাবার না খেয়ে
সাইটে সরিয়ে রাখতেন। কিন্তু খাবার নিয়ে কখন কোনো সমালোচনা করতেন না। "নবী (সাঃ)
কখনই কোন খাবারের সমালোচনা করেননি, তাঁকে যদি দাওয়াত করা হত তবে তিনি খাবার
পছন্দ করলে তা খেতেন এবং অপছন্দ করলে ছেড়ে দিতেন।"
পরিমিত পরিমাণে খাবার খান
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ খাবার খাওয়ার
সময় তার পেটের চেয়ে আর কিছুই নেই এতো ভরাট করে না। একজন মানুষের মেরুদণ্ড
সোজা রাখতে অল্প পরিমাণ খাওয়াই যথেষ্ট। অতঃপর কেউ যদি তার পেট পুরা ভরতেই
চায়, তবে এক তৃতীয়াংশ খাবার, এক তৃতীয়াংশ পানীয় এবং এক তৃতীয়াংশ বায়ু
দিয়ে ভরতে পারে।
আরো পড়ুনঃ বন্ধুর বিয়ে নিয়ে স্ট্যাটাস
সুষম খাবার খাওয়া এবং পরিমিত পরিমাণে খাবার খাওয়া সুস্বাস্থ্য অর্জনের
অন্যতম সেরা উপায়। এই বিশেষ হাদিসটি আমাদের খাবারের সময় অতিরিক্ত না
খাওয়ার কথা উল্লেখ করে। কারণ বেশি খেলে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হতে পারে।
আপনি যদি খাওয়ার পরে ক্লান্ত এবং অত্যন্ত পরিপূর্ণ মনে করেন তবে এটি একটি
লক্ষণ যে আপনার খাবার খাওয়ার নিয়ম ঠিক নয় এবং আপনি যেভাবে খাচ্ছেন তাতে কিছু
পরিবর্তন করতে হবে।
খাবার অপচয় করবেন না
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কেউ খায়, তখন তার
আঙ্গুলে লেগে থাকা খাবার চেটে না খাওয়া পর্যন্ত হাত ধুবে না বা তোয়ালে দিয়ে
হাত মুছবে না, কারণ সে জানে না খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে। সহীহ মুসলিম
এমন অনেক বর্ণনা এবং এমনকি কুরআনের আয়াত রয়েছে যা আমাদের ধর্মে অপচয় না
করার গুরুত্ব তুলে ধরে। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে বিলিয়ন টন খাবার নষ্ট হয়।
আমাদের নিজের বাড়িতে প্রচুর খাবারের অপচয় হয়, এটা জানার পর খাবার অপচয় করা
উচিত নয়। এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা মত খাবারের বরকত
পেতে আঙ্গুল চেটে খাওয়া উচিত কোন টুকরো নষ্ট করা উচিত না।
মহানবী নিজেও এই কাজ করতেন। মনে রাখবেন যে আমাদের দ্বীন খাদ্যের অপচয়কে
উৎসাহিত করে না, আমরা প্রতিদিন আমাদের বাড়িতে যে খাবার অপচয় করি সে
সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া শুরু করুন। আমরা সবাই যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহকে মেনে চলতে পারি
এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দোয়া, ক্ষমা ও ভালোবাসা পেতে পারি।
খাবার ভাগ করে নেওয়া
নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সাহাবীদের ভাগ করে করে নেওয়ার বরকত হিসেবে জানিয়েছেন।
জীবনের ভাল জিনিসগুলি সেটা খাবারই হোক না কেন গরীব মানুষের সাথে ভাগ করে নিলে
আল্লাহ খুব খুশি হয়। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, অভাবী এবং দুস্থদের
সাথে খাবার ভাগ করে নেওয়া মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভালোবাসা বাড়ায়। আর একা
একা খাবার খাওয়া উচিত নয় কারণ একা একা খাবার খেলে কম বরকত পাওয়া যায়। নবী
মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মতে, "একসাথে খাও, আলাদাভাবে নয়, কারণ বরকত সবার সাথে
খাওয়াই জড়িত।"
আরো পড়ুনঃ মাসিক বন্ধ রাখার কোন ওষুধ আছে কি
ধীরে ধীরে খাবার খানঃ ধীরে ধীরে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ধীরে ধীরে খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। এর ফলে চোয়ালের ব্যায়াম হয় এবং
খাবারের সাথে লালা মিশে যায়। তাই, ভালো হজম হয় কারণ খাদ্যের কণাগুলোকে ছোট
ছোট টুকরো করে ভাঙ্গা হয়, পেট বা অন্ত্রে খুব হজমের প্রয়োজন হয় না। আরো
বর্ণিত আছে যে, নবী (সাঃ) বলেছেন, "আমি হেলান দিয়ে খাই না।"
ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার ব্যাপারে কি বলে - শেষ কথা
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাবার খাওয়ার অনেক নিয়ম
জানিয়ে গেছেন। তিনি তাঁর সঙ্গীদের খাওয়ার আগে এবং পরে তাদের হাত ধোয়ার জন্য
বলেছিলেন, 'সর্বশক্তিমান আল্লাহর' প্রশংসা করে খাওয়া শুরু করতে, অতিরিক্ত
খাওয়া-দাওয়া না করতে বলেছিলেন। এবং পেট ভরে খাওয়ার বিষয়ে বলেছেন যে খাওয়ার সময়
পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবার, একভাগ পানি ও একভাগ বাতাস খেতে হবে। এছাড়াও খাবার
খাওয়া আরো অনেক নিয়ম আছে। উপরে আমি ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার ব্যাপারে কি বলে তা
জানিয়েছি। আশা করি ইসলাম পেট ভরে খাওয়ার ব্যাপারে কি বলে তা ভালোবভাবে জানতে
পারবেন। ২২৪৯৮
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url