ফজরের নামাজ কয় রাকাত

ফজরের নামাজ কয় রাকাত তা জেনে নিলে সঠিকভাবে ফজরের নামাজ পড়তে পারবেন। ফজরের নামাজ কয় রাকাত? তা নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। তাই ফজরের নামাজের রাকাতের সংখ্যা জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগের সাথে পড়তে থাকুন। চলুন দেখে নেই, ফজরের নামাজ কয় রাকাত? 

পেজ সূচিপত্র: ফজরের নামাজ কয় রাকাত

ফজরের নামাজ কয় রাকাত - fojorer namaj koi rakat

মুসলমানদের উপরে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক। কোন ব্যক্তি যদি নিজেকে মুসলমান হিসেবে দাবী করে তাহলে অবশ্যই তাকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। মহান আল্লাহ তাআলার  সবথেকে বড় নির্দেশ হলো নামাজ আদায় করা। মহান আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে ৮২ বার নামাজ পড়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। 

তাই আপনি যদি একজন মুসলমান হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। আপনি যদি নামাজ আদায় করতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নামাজের নিয়ম কানুন সমূহ বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে হবে। 

বিশেষ করে কোন নামাজ কত রাকাত? সে বিষয়ে সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নেয়া উচিত। দিনের সর্বপ্রথম নামাজ হলো ফজরের নামাজ। ফজরের ফরজ নামাজ মোট দুই রাকাত। এবং এর সাথে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে। অর্থাৎ ফজরের সর্বমোট নামাজ হলো চার রাকাত। 

ফজরের নামাজের নিয়ম

ফজরের নামাজ কয় রাকাত? তা উপরে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে ফজরের নামাজের নিয়ম-কানুন বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হলো। আশা করি নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো আপনার অনেক উপকারে আসবে। 

ফজরের নামাজের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করে আপনি যদি নামাজ পড়েন, তাহলে কিন্তু নামাজ আদায় হবে না। তাই নামাজ আদায় করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সঠিক পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। নিচে ফজরের নামাজের নিয়ম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। 
নামাজের মধ্যে কিছু অত্যাবশ্যকীয় কাজে রয়েছে। যে কাজগুলো যথাযথভাবে না করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। নামাজের ভিতরে বাইরে মোট ১৩ টি ফরজ রয়েছে। ১৩ টি ফরজের মধ্যে নামাজের বাহিরে রয়েছে সাতটি এবং ভিতরে রয়েছে ছয়টি। নিচে নামাজের ভিতরে এবং বাইরের ফরজ গুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো। 

নামাজের ভিতরের ফরজ:
  • তাকবীরে তাহরীমা: নামাজের অন্যতম একটি ফরজ কাজ হল তাকবীরে তাহরিমা পাঠ করা। তাকবীরে তাহরীমা পাঠ করে নামাজে হাত বাঁধতে হয়। তাকবীরে তাহরীমা হল "আল্লাহু আকবার"। নামাজের স্থানে দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম আপনাকে তাকবীরে তাহরীমা পাঠ করে হাত বাধতে হবে। এরপরে নামাজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। 
  • কেয়াম করা: নামাজের অন্যতম আরেকটি অবশ্য পালনীয় কাজ হলো কেয়াম করা। অর্থাৎ দাঁড়ানো। আপনি যদি সক্ষম হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে নামাজ দাঁড়িয়ে আদায় করতে হবে। তবে যদি কোনো কারণে আপনি দাঁড়াতে সক্ষম না হন, সেক্ষেত্রে বসে বসে কিংবা শুয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। তবে সক্ষম থাকা অবস্থায় বসে নামাজ আদায় হবে না। 
  • কেরাত পড়া: এর পরে নামাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল কেরাত পাঠ করা। কেরাত পাঠ করা ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হবে না। সর্বপ্রথম আপনাকে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে এরপরে সূরা ফাতিহার সাথে অন্যান্য সূরা মিলাতে হবে। প্রত্যেক রাকাতেই সূরা ফাতিহা পাঠ করা বাধ্যতামূলক। সূরা ফাতিহা পাঠ করা ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হবে না। 
  • রুকু করা: নামাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কাজ হলো রুকু করা। মহান আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে বহু জায়গায় রুকু করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।আর তাই নামাজ পড়তে গেলে অবশ্যই আপনাকে রুকু করতে হবে। তবে যে সকল ব্যক্তি বসে নামাজ পড়ে তাদের রুকু করার সুযোগ নেই। বরং তারা সিজদার মত করে সামনের দিকে ঝুঁকে যাবে। তবে মাথা মাটিতে রাখবে না বরং কিছুটা উপরে রাখবে। 
  • সেজদা করা: আপনি যদি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে সেজদা করতে হবে। সেজদা করা ব্যতীত নামাজ আদায় হবে না। তবে যদি কোন ব্যক্তি সেজদা করতে অক্ষম হয় সেক্ষেত্রে  তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
  • শেষ বৈঠক করা: নামাজের সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকতা হলো শেষ বৈঠক করা। শেষ বৈঠকের মাধ্যমে নামাজের সমাপ্তি ঘটে। শেষ বৈঠকে বেশ কিছু দোয়া কালাম পাঠ করতে হয়। দোয়া কালাম গুলো পাঠ করার পরে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ সমাপ্ত করতে হয়।
নামাজের বাহিরের ফরজ:
  • শরীর পবিত্র হওয়া: নামাজ পড়ার জন্য অবশ্যই আপনার শরীর পবিত্র হতে হবে। শরীর পবিত্র না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। তাই নামাজ পড়ার পূর্ব শর্ত হলো শরীর পবিত্র রাখা। 
  • কাপড় পবিত্র হওয়া: আপনি যদি নামাজ পড়তে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে শরীরের পবিত্রতার পাশাপাশি কাপড় পবিত্র হতে হবে। কাপড় পবিত্র না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। 
  • নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া: শরীর এবং কাপড় পাক হওয়ার পাশাপাশি নামাজের জায়গাও পবিত্র হতে হবে। অপবিত্র জায়গায় নামাজ আদায় করা যায় না।
  • সতর ঢাকা: নামাজ পড়ার জন্য অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। পুরুষদের ক্ষেত্রে সতর হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত আর নারীদের ক্ষেত্রে সতর হলো সম্পূর্ণ শরীর। অর্থাৎ কোন পুরুষ যদি নামাজ পড়তে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে অন্ততপক্ষে কোমর থেকে হাটু পর্যন্ত কাপড় পরিধান করতে হবে এবং নারীকে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে নামাজ আদায় করতে হবে। 
  • কিবলামুখী হওয়া: নামাজ আদায় করার জন্য অবশ্যই আপনাকে কিবলামুখী হতে হবে। কেবলামুখী হওয়া ছাড়া অন্য কোন দিকে ঘুরে নামাজ আদায় করলে তার শুদ্ধ হবে না। 
  • ওয়াক্তমতো নামাজ আদায় করা: ওয়াক্ত মত নামাজ আদায় করা নামাজের অন্যতম একটি ফরজ কাজ।  ওয়াক্ত গেলে নামাজ আদায় করা যায় না। 
  • নামাজের নিয়ত করা: নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে নিয়ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নামাজের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে মনে মনে নিয়ত করতে হবে।

ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম

ফজরের নামাজ কয় রাকাত আশা করি তা জেনেছেন। কেননা উপরে এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অন্যান্য নামাজের মতই ফজরের সুন্নত নামাজ পড়তে হয়। ফজরের সুন্নত নামাজ পড়ার আলাদা কোন নিয়ম নেই। তবে ফজরের সুন্নত নামাজ অবশ্যই আপনাকে একা একা পড়তে হবে। সুন্নত নামাজ কখনো জামাতের সাথে পড়া যায় না। 

যদি কোনো কারণে আপনি ফজরের সুন্নত নামাজ ফজরের ফরজ নামাজের আগে পড়তে না পারেন, তাহলে ফজর নামাজ পড়ার পরে তা আদায় করে নিতে হবে। তবে ফজরের কাজা নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে শুধু ফজরের ফরজ নামাজ পড়লেই চলবে সুন্নত নামাজ পড়ার প্রয়োজন নেই। 

ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ পড়ার নিয়ম

উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো যদি আপনি মনোযোগের সাথে পড়েন, তাহলে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে, ফজরের নামাজ কয় রাকাত? ফজরের ফরজ নামাজ কিভাবে আদায় করতে হবে সেই বিষয়ে সম্পর্কে ইতিমধ্যেই উপরে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 

তাই আপনি যদি ফজরের নামাজ যথাযথ নিয়ম অনুসারে পড়তে চান সেক্ষেত্রের উপরে উল্লেখিত ফজরের নামাজ পড়ার পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি অনুসরণ করলে আশা করি আপনি সঠিকভাবে ফজরের নামাজ আদায় করতে সক্ষম হবেন। 

শেষ কথা

ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম এবং নামাজের যাবতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগের সাথে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই জেনেছেন যে, ফজরের নামাজ কয় রাকাত? 
নামাজ আদায় করার যে সকল পদ্ধতি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে সেই পদ্ধতি সমূহ অবশ্যই আপনাকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি গুলো যদি আপনি যথাযথভাবে অনুসরণ না করেন তাহলে কিন্তু আপনার নামাজ শুদ্ধ হবে না। নামাজের শুদ্ধ হওয়ার জন্য উপরে উল্লেখিত ছয়টি কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৬৪১৩

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url