টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে

টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে সেই বিষয়ে আজকে বিস্তারিত লেখা হবে। অনেকেই জানে না যে, শীতকালীন সবজি টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে। আজকের এই লেখাটি পড়লে তারা জানতে পারবেন যে টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে।

টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে সেই রোগের তালিকা বর্ণনা সহকারে তুলে ধরা হবে। চলুন জেনে নিবো, টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে।

পেজ সূচি:

ভূমিকা:

টমেটো হলো শীতকালীন একটি সবজি। যদিও এখন সারা বছরই টমেটো চাষ করা হয়। বেশিরভাগ মানুষের প্রিয় এই সবজির বিভিন্ন রকম রোগ হতে পারে। গাছে থাকা অবস্থায়ই টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে সেই রোগগুলোর ধরন ও প্রতিকার এখানে তুলে ধরবো।

সালাত, তরকারি, আচার, সস্ এমন আরো অনেক খাবারে টমেটো ভিন্ন রকমের স্বাদ নিয়ে আসে। শীতকালে বাঙালির ঘরে ঘরে টমেটো না হলে খাবার চলে না। অনেকে বাসা বাড়ির ছাদেও টমেটোর চাষ করে থাকেন। তারা সবাই এই পোস্টটি পড়লে জানতে পারবেন যে, টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা:

টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে সেগুলো এখানে বিস্তারিত বর্ণনা করা হবে। তবে কিছু কথা বলে রাখা প্রয়োজন। এখানে যেই রোগের তালিকা ও প্রতিকার তুলে ধরা হবে, সেগুলোই কিন্তু সর্বশেষ সমাধান নয়। নিত্য নতুন রোগ বের হচ্ছে এবং রোগের চিকিৎসাও আবিষ্কৃত হচ্ছে। তাই টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে এই বিষয়ে আপডেট তথ্যগুলো জেনে রাখা উচিৎ।

টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে:

টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে সেই রোগগুলোর নাম ও ধরন তুলে ধরবো। এছাড়াও আপনি যদি না জেনে থাকেন যে টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে এবং সেগুলোর প্রতিকার কি, তবে আপনার জন্যই প্রতিকার সহ প্রতিটি রোগের বর্ণনা এখানে তুলে ধরছি:

১. পাতা কোকড়ানো:

মূলত ভাইরাসের কারণে এই রোগটি হয়। এক ধরনের জাব পোকা এই রোগ বহন করে। গাছের পাতায় হলুদ ও সবুজ ছোপ ছোপ দাগ দেখলে বুঝবেন এই রোগ হয়েছে। এই রোগে গাছের পাতার গায়ে হলুদ ও সবুজ রঙের মোজাইকের মতো দাগ দেখা যায়, অবশেষে পাতা কুঁকড়ে যায়।

আরো পড়ুন: কিভাবে কমলা গাছের পরিচর্যা নিবেন

প্রতিকার: ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় ঔষুধ ১০ লিটার পানিয়ে পরিমাণমতো মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার গাছে স্প্রে করে দিলে এই রোগ দমন করা সম্ভব।

২. গোড়া ও মূল পচা:

টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে সেই রোগগুলোর মধ্যে এটা খুব কমন একটি রোগ। পিথিয়াম, রাইজোকটোনিয়া, ফাইটোপথোরা নামক কিছু মাটিবাহিত ছত্রাকের মাধ্যমে এই রোগ হয়ে থাকে। সাধারণত টমেটোর চাষ যদি এমন কোনো স্যাঁতস্যাঁতে, অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় করা হয়, যেখানে বাতাস সচরাচর চলাচল করতে পারে না, সেইসব জায়গায় অল্পতেই ছত্রাক জন্মে।

সেই ছত্রাকের আধিক্য গাছে এই রোগ ছড়ায়। এটা খুব মারাত্মক একটি রোগ, কারণ একবার ছড়িয়ে পড়লে চারাগাছ বেড়েই উঠতে পারে না। বীজের অঙ্কুরোদ্গম অবস্থায় এই রোগ হলে বীজ পচে নষ্ট হয়ে যায়। তাই আগাম সতর্কতার জন্য টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন।

প্রতিকার: অবশ্যই খোলামেলা জায়গা যেখানে আলো, বাতাস সহজে চলাচল করতে পারে, এমন জায়গায় টমেটোর চাষ করা উচিৎ। বীজ বপনের প্রায় ২ সপ্তাহ পূর্বে ফরমালডিহাইড দিয়ে বীজতলা শোধন করতে হয়। এছাড়া মুরগির বিষ্ঠা, কাঠের গুড়া বীজ বপনের ৩ সপ্তাহ আগে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে এই রোগ দমন করা যায়।

৩. আগাম ধসা:

টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে সেগুলো একে একে এখানে তুলে ধরছি। মনোযোগ সহকারে জেনে নিন। এই আগাম ধসা রোগে মূলত অলটারনারিয়া নামক ছত্রাকের আক্রমণ হয়। সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা ও অধিক আদ্রতা এই রোগ বেশি ছড়ায়।

গাছের পাতায় কালো বা হালকা বাদামী রঙের বৃত্তাকার দাগ পড়ে। পাতার অনেকখানি নষ্ট হয়ে যায় এবং শেষে পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে। সাধারণত প্রথমে একটু বয়স্ক পাতায় এই রোগের লক্ষণ আগে দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে অন্য পাতাগুলোতে আক্রমণ হয়।

প্রতিকার: বীজ বপনের পূর্বে প্রোভেক্স -২০০ বা ব্যভিস্টিন দ্বারা বীজগুলোকে শোধন করে নিতে হবে। নিয়মিত সার ও পানি দিতে হবে। গাছের আগাছাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।

৪. নাবি ধসা:

ফাইটপথোরা ইনফেস্ট্যান্স নামক ছত্রাকের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সময় এই ধরনের রোগ বেশি ছড়ায়। আদ্রতার সময় এই রোগ বিস্তার লাভ করে।

প্রথমে পাতায় সবুজ ও কালো পানিভেজা আঁকাবাঁকা দাগ পড়ে। পাতার নিচে সাদা সাদা ছত্রাক হতে পারে। পাতা থেকে কান্ড এবং কান্ড থেকে ফলে এই রোগ ছড়ায়। পানি ভেজা দাগের প্রকোপ বেড়ে যায়।

আরো পড়ুন: জানুন রেশম চাষ পদ্ধতি

প্রতিকার: টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে সেই রোগগুলো এবং এর সহজ প্রতিকারগুলোও বর্ণনা করছি। ভালো করে জেনে রাখুন। এই রোগটি মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। তাই আগেই ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।

রোগমুক্ত এলাকা থেকে টমেটোর বীজ সংগ্রহ করুন। আলু ও টমেটো গাছ পাশাপাশি লাগানো উচিৎ না। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া মাত্রই মেলোডি ডিও প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম এবং সিকিউর প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম মিশিয়ে পরপর ৭ দিন কমপক্ষে ৩ বার পাতাসহ পুরো গাছে স্প্রে করতে হবে।

৫. ফিউজারিয়াম ঢলে পড়া:

টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে সেই রোগগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম মারাত্মক একটি রোগ। ফিউজারিয়াম অক্সিস্পোরাম নামের ছত্রাক দ্বারা এই রোগ ছড়ায়। গাছের কান্ডে ও শিকড়ে বাদামী দাগ পড়ে। বয়স্ক পাতাগুলো নিচের দিকে বেঁকে যায়। আস্তে আস্তে পুরো গাছ নেতিয়ে পড়ে। পাতাগুলো নিচের দিকে বেঁকে যায় এবং অবশেষে ঝরে পড়ে।

প্রতিকার: বীজ বপনের পূর্বে মাটি শোধন করে নিতে হবে। আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলতে হয়। জমিতে পরিমাণ মতো চুন, পটাশ সার প্রয়োগ করে এই রোগ নির্মূল করা যায়।

সতর্কতা:

টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে এবং উক্ত রোগগুলোর প্রতিকার ব্যবস্থা তুলে ধরা হলো। তবে প্রতিকার করার পদ্ধতি প্রয়োগ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। রোগ প্রতিরোধে গাছে যেসব ঔষুধ প্রয়োগ করা হয়, তা পরিমাণে বেশি হলে গাছ মরে যেতে পারে।

আরো পড়ুন: আদা খাওয়ার উপকারিতা

তাছাড়া টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে এই বিষয়ে আপনার আগে থেকেই মোটামুটি জানা থাকলে রোগের উপসর্গ দেখা মাত্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন, যেটা জানা না থাকলে সম্ভব না।

পরিশেষে:

সব শেষে যেটা বলবো, সতর্ক থাকুন। সুস্বাদু সবজি টমেটো চাষ করার শখ যদি আপনার থাকে, তবে টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে এই সম্পর্কে আগেই জেনে নিন। এতে করে সঠিক নিয়মে চাষ করলে টমেটোর ফলন ভালো হবে। টমেটোর বাম্পার ফলন পেতে টমেটোর কি কি রোগ হতে পারে সেই বিষয়ে সচেতন থাকা উচিৎ। (25957)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url